ভারতের সবচেয়ে সস্তা ৭ সিটার MPV রেনো ট্রাইবারের নতুন ফেসলিফ্ট লঞ্চ, দাম শুরু ₹৬.২৯ লক্ষ
রেনো ইন্ডিয়া ২৩ জুলাই ভারতে রেনো ট্রাইবার গাড়িটার নতুন ভার্সন লঞ্চ করেছে। এই গাড়িটা এখনো দেশের সবচেয়ে সস্তা ৭ সিটার MPV (মাল্টি পারপাস ভেহিকল)। নতুন এই ফেসলিফ্ট মডেলে শুধু নতুন ডিজাইন আর রঙ নয়, এর সঙ্গে অনেক নতুন ফিচারও এসেছে। এবার গাড়িটায় ২১টা অ্যাডভান্স সেফটি ফিচার থাকছে একেবারে স্ট্যান্ডার্ড। এই নতুন ট্রাইবার ৪টা ভেরিয়েন্টে পাওয়া যাচ্ছে – অথেন্টিক, ইভোলিউশন, টেকনো আর ইমোশন। এর এক্স-শোরুম দাম শুরু হয়েছে ₹৬.২৯ লক্ষ থেকে। ২০১৯ সালে যখন প্রথম লঞ্চ হয়েছিল, তখন থেকেই ট্রাইবার বেশ জনপ্রিয়। এবার এই প্রথম বড়সড় আপডেট এসেছে। যদিও এর সরাসরি কোনো কম্পিটিটর নেই, তবুও এর দাম মারুতি আর্টিগা, XL6 আর কিয়া ক্যারেন্সের তুলনায় অনেকটাই কম।
বাইরের লুক: নতুন ডিজাইন, তিনটা নতুন রঙ আর নতুন রেনো লোগো
নতুন ট্রাইবারের ডিজাইন অনেকটাই বদলে গেছে। সামনের দিকে গ্লস ব্ল্যাক গ্রিল, ভার্টিক্যাল স্লেটস আর মাঝখানে নতুন 2D রেনো লোগো দেওয়া হয়েছে, যেটা এই প্রথম রেনো ইন্ডিয়ার কোনো গাড়িতে দেখা গেল। LED হেডলাইট আর আইব্রো স্টাইলের DRL গাড়িটাকে একটা প্রিমিয়াম লুক দিয়েছে। ফ্রন্ট বাম্পারটা বোল্ড, তার নিচে সিলভার টাচ আর LED ফগ লাইট আছে। সামনে থেকে দেখতে ট্রাইবার এখন অনেক স্টাইলিশ।
সাইড থেকে দেখতে পুরোনো মডেলের মতোই লাগলেও কিছু আপডেট আছে। যেমন ১৫ ইঞ্চির ডুয়াল টোন অ্যালয় হুইল, ব্ল্যাক ORVM, রুফ রেল আর পুল টাইপ ডোর হ্যান্ডেল। হুইল আর্ক আর গাড়ির পুরো পাশ জুড়ে বডি ক্ল্যাডিং আছে, যেটা একটু রগড়ে গাড়ির লুক বাড়িয়ে দেয়।
পেছনের দিকে আছে নতুন LED টেলল্যাম্প, যেগুলো গ্লস ব্ল্যাক প্যানেলের সাহায্যে কানেক্টেড। ট্রাইবার নামটা মাঝখানে অ্যলুমিনিয়াম ফিনিশে লেখা। নিচে ব্ল্যাক বাম্পার আর সিলভার স্কিড প্লেট আছে। নতুন মডেলে তিনটা নতুন রঙ এসেছে – জান্সকার ব্লু, শ্যাডো গ্রে আর অ্যাম্বার টেরাকোটা।
আরো পড়ুন: https://babaiigl.blogspot.com/2025/07/new-maruti-swift-2025-mileage-features-emi.html
ভিতরের দিক: নতুন রঙের থিম, ৮-ইঞ্চির স্ক্রিন, আর ফ্লেক্সিবল সিটিং
২০২৫ ট্রাইবারের ইন্টেরিয়র আগের থেকে অনেকটাই স্মার্ট হয়েছে। কালার থিমটা এখন ব্ল্যাক আর বেজ মিলিয়ে হয়েছে, যেটা দেখতে ভালো লাগে। কেবিনটা বেশ বড়ো আর হাওয়া খেতে সুবিধে হয়। সিটগুলোতে ফ্যাব্রিক কভার দেওয়া হয়েছে, যাতে বসতে আরাম লাগে আর সেটা টেকেও বেশি।
ড্যাশবোর্ড ডিজাইন পুরো নতুন, যেখানে ৮-ইঞ্চির ফ্লোটিং টাচস্ক্রিন ইনফোটেনমেন্ট সিস্টেম আছে। পুরো গাড়িটা ৭-সিটার, আর দ্বিতীয় সারিতে 60:40 স্প্লিট সিট আছে, যেগুলো স্লাইড, রিক্লাইন আর ফোল্ড করা যায়। খুব সহজে সিট গুছিয়ে নেওয়া যায়।
ইঞ্জিন পারফরম্যান্স: ১.০ লিটারের পেট্রোল ইঞ্জিন, মাইলেজ ১৮-২০ কিমি/লিটার
গাড়ির ইঞ্জিনে তেমন কোনো বদল আনা হয়নি। আগের মতোই এতে ১.০-লিটারের ৩-সিলিন্ডার পেট্রোল ইঞ্জিন আছে, যেটা ৭২PS পাওয়ার আর ৯৬Nm টর্ক দেয়। অনেকে ধরেছিল যে এবার টার্বো ইঞ্জিন আসবে, কিন্তু সেটা আসেনি। গাড়িতে ৫-স্পিড ম্যানুয়াল (MT) আর অটোমেটেড ম্যানুয়াল ট্রান্সমিশন (AMT) – দুটোই অপশন আছে। টপ ভেরিয়েন্টে (ইমোশন AMT) অটোমেটিক অপশন পাবেন, যার জন্য প্রায় ₹৫২,০০০ বেশি দিতে হবে।
মাইলেজের কথা বললে, কোম্পানির মতে এটা ১৮.২ থেকে ২০ কিমি/লিটার পর্যন্ত যেতে পারে। চাইলে CNG কিট লাগাতে পারেন, যার দাম প্রায় ₹৭৯,০০০ – ডিলারশিপ থেকেই লাগিয়ে নেয়া যাবে। যদিও CNG-তে একটু পারফরম্যান্স কম হবে, কিন্তু তেল বাঁচানোর জন্য ভালো বিকল্প।
এই গাড়ির ওজন কম – মাত্র ৯৪৭ কেজি, তাই শহরের ভিড়ে চালানো সহজ। ইঞ্জিন শহরের জন্য ঠিকঠাক, তবে হাইওয়েতে ওভারটেক বা ভারী লোড তুলতে গেলে একটু ধীর লাগে। টপ স্পিড প্রায় ১৫০ কিমি/ঘণ্টা, তবে বাস্তবে ১০০-১২০ কিমি/ঘণ্টা পর্যন্ত আরামসে যায়। সাসপেনশনও ভালো, খারাপ রাস্তার ধকল গাড়ি ভালোভাবে নিতে পারে।
ফিচারস: ৮-ইঞ্চির স্ক্রিন, ওয়্যারলেস চার্জার, অটো AC ইত্যাদি
এই গাড়িতে অনেক কাজের ফিচার দেওয়া হয়েছে – যেমন ৮-ইঞ্চির টাচস্ক্রিন ইনফোটেনমেন্ট সিস্টেম, ৭-ইঞ্চির সেমি-ডিজিটাল ড্রাইভার ডিসপ্লে, পুশ বাটন স্টার্ট-স্টপ, অটো AC যার পেছনেও ভেন্ট আছে, রিমোট কীলেস এন্ট্রি, ওয়্যারলেস ফোন চার্জার, ৬টা স্পিকারসহ দারুণ সাউন্ড সিস্টেম আর রিয়ার ভিউ পার্কিং ক্যামেরা।
সেফটি ফিচারস: এবার স্ট্যান্ডার্ড ৬টা এয়ারব্যাগ সহ মোট ২১টা সেফটি ফিচার
এবার রেনো ট্রাইবারে মোট ২১টা সেফটি ফিচার দেওয়া হয়েছে। ৬টা এয়ারব্যাগ (ড্রাইভার, কো-প্যাসেঞ্জার আর সাইড কার্টেন), রেন সেন্সিং ওয়াইপার, ফ্রন্ট পার্কিং সেন্সর, ABS + EBD, ইলেকট্রনিক স্টেবিলিটি কন্ট্রোল (ESC), হিল স্টার্ট অ্যাসিস্ট, টায়ার প্রেসার মনিটরিং সিস্টেম (TPMS), ট্র্যাকশন কন্ট্রোল, আর রিয়ার ক্যামেরার সঙ্গে সেন্সর – সবই থাকছে।
আমার মতামত:
ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়, রেনো ট্রাইবার এই দামে ৭ সিটার MPV হিসেবে বেশ ভালো একটা ডিল। নতুন ডিজাইনটা চোখে লাগে আর ইন্টেরিয়রও আগের থেকে অনেক বেশি প্রিমিয়াম হয়েছে। বিশেষ করে ২১টা সেফটি ফিচার স্ট্যান্ডার্ড দেওয়া সত্যিই প্রশংসনীয় – এই দামে এমন সেফটি এখনকার দিনে খুব কম গাড়িতেই মেলে। তবে ইঞ্জিনটা একটু শক্তিশালী হলে ভালো হতো, কারণ হাইওয়েতে ওভারটেক করার সময় একটু ধীর লাগে। যাদের বাজেট সীমিত কিন্তু একটা ফ্যামিলি গাড়ি চাই, তাদের জন্য এই গাড়িটা নিঃসন্দেহে ভালো অপশন হতে পারে।
ডিসক্লেইমার
এই প্রতিবেদনে উল্লিখিত গাড়ির দাম, ফিচার এবং স্পেসিফিকেশন রেনো ইন্ডিয়ার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা ডিলারশিপের ভিত্তিতে তৈরি। সময় ও অঞ্চলের ভিত্তিতে কিছু তথ্য পরিবর্তন হতে পারে। বিস্তারিত জানার জন্য কাছাকাছি রেনো ডিলারশিপে যোগাযোগ করুন।
0 Comments